মোঃসাদ্দাম হোসাইন সোহান
বিশেষ প্রতিনিধিঃ-
বাড়ি জোড় করে দখল করতে মিথ্যা চাদাবাজি মামলায় নিরীহ পরিবারকে গ্রেফতার, মুচলেকায় ছাড়পেলেও জমি দখল নিতে বাড়ি ভাংচুর , প্রাননাশের হুমকী।
ফরিদপুর জেলা শহরের পশ্চিমখাবাসপুর এলাকার পুরোনো বাসিন্দা মোছাম্মৎ খোদেজা বেগম। যাহা ফরিদপুর পৌরসভার হোল্ডিং নং ৩/৭,বাড়ি নং ৩১৩, মাও ঃ মোবারক আলী মহল,মওলানা আব্দুল আলী সড়ক, ফরিদপুর। একটি পারিবারিক লেনদেনের অজুহাতে বাড়ির মালিকানা দাবী করে ফরিদপুর পৌরসভা থেকে একই বাড়িতে আরেকটি হোল্ডিং নাম্বার দিয়েছে যাহাতে উল্ল্যেখ রয়েছে আলহাজ্ব মঞ্জিল, মোঃ নুরুল ইসলাম,হোল্ডিং নং ৩/৭, ওয়ার্ড নং ১৩, মাওঃ আব্দুল আলী সড়ক,পশ্চিম খাবাসপুর ,ফরিদপুর।এরই ধারাবাহিকতায় কিছু কথিত সন্ত্রাসী দিয়ে জোড় পূর্বক বাড়ি দখল নিতে বাড়ির গেট ও মুল দড়জার তালা ভেঙ্গে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে আসবাবপত্র ভাংচুর , দামী জিনিসপত্র লুটসহ বাড়িতে থাকা মেয়ে ছেলে এবং শিশুদের ভয়ভীতি প্রদর্শন কওে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়।
সরেজমিনে সাংবাদিকরা ঘটনা স্থলে গেলে বিষয়টির সত্যতা মেলে। বাড়ির প্রধান কর্তা মোছাম্মৎ খোদেজা বেগম (৬৫) সাংবাদিকদের জানান, বেশ কয়েকবার এই বাড়ির দখল নিতে চেষ্টা করেছে।বাড়ির গেইট ভাংগার জন্য অনেক যুবক বাড়িতে হামলা করেছে ফলে এ বিষয়ে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের সাথে দেখা করে বাড়ি জবর দখল এবং ভাংচুরের ভিডিও সহ মৌখিক অভিযোগ দেয়া হয়েছে পরিবারের পক্ষে। সে মোতাবেক পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে বলেন। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে কোতয়ালী থানা পুলিশ দখলকৃত বাড়ির তালা ভেঙ্গে প্রকৃত মালিককে ঘড় বুঝিয়ে দেয়।
এরপর গত ২৬ জানুয়ারী মঙ্গলবার বেলা ৩টার সময় মোঃ নুরুল ইসলামের স্ত্রী এনিছা আক্তার রূমার দেয়া একটি মিথ্যা চাদাবাজির অভিযোগএর প্রেক্ষিতে ফরিদপুর কোতয়ারী থানা পুলিশ আমাকে সহ আমার ছেলে মোঃ খালেদ , আমার পুত্র বধূ মোছাম্মৎ তামান্না আক্তারকে গ্রেফতার করে। একটি শালিশের প্রস্তাব দিয়ে মুচলেকার মাধ্যমে আমরা ছাড়া পাই। বাড়িতে এসে দেখি আমাদেও বাড়ির কলাপসিবল মুল গেইট এর তালা ভাংঙ্গা। ভিতরে যাওয়ার পর দেখি ঘড়ের দড়জার তালা ভাংগা এবং ভিতরের আসবাবপত্রসহ জামাকাপড়ের সবকিছু মেঝেতে ছড়ানো ছিটানো। বাড়িতে থাকা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই সাথে নগদটাকা এবং স্বংর্নালংকার (যাহা বর্তমান বাজারে মূল্যে ৯০ হাজার টাকারমত হবে ) নেই।এ বিষয়ে আমরা একটি অভিযোগ আদালতে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
পরিবারের সবাই গ্রেফতার হওয়ার সময় আমার নাতি আব্দুল্লাহ (৩) ও নাতনি আয়মান (৪)নিয়ে তার ছোট খালা শারমিন আক্তার পালিয়ে ছিলো পাশের বাড়িতে যেখান থেকে আমাদের ঘড় দেখা যায়। ফলে তাকে গ্রেফতার করেনি।
এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী শারমিন আক্তারকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, পরিবারের সবাইকে যখন পুলিশ গ্রেফতার কওে নিয়ে যায় তখন আমি পাশের বাড়িতে ছোট্ট বাচ্চাদের নিয়ে পালাই এবং পাশের ঘড় থেকে দেখতে পাই যে নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে কিছু যুবক বাড়ির কলাপসিবল গেইট ভাংগে এবং ঘড়ের দড়জার তালা ভাংগে সে সময় তাদেও হাতে ছিলো হাতুরী, দা । তারা তালা ভেংগে ঘড়ে প্রবেশ করে এবং গালাগালি দিয়ে ঘড়ে আসবাবপত্র যত্রতত্র ফেলছিলো। বাড়িতে যেহেতু কেউ ছিলো না তাই তাদেও রোধ করা সম্ভব হয় নাই। প্রায় আড়াই ঘন্টা ব্যাপী তারা ঐ বাড়িতে হামলা করে অবস্থান নেয়।বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে স্থনয়ি অনেকে এগিয়ে আসে ফলে নুরুল ইসলাম তার লোকজন নিয়ে সরে পড়ে।
এ বিষয়ে পরিবারের ছোট ছেলে খন্দকার মোঃ খালেদ সাংবাদিকদের জানান, এই বাড়ির দখল ঘটনার পরের দিন ২৭ জানুয়ারী আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টার সময় নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে কিছু যুবক আবার বাড়িতে আসে এবং বলে শামসুলউলুম মাদ্রার গেইট সংলগ্ন তোর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খন্দকার উড এন্ড ফুড ভিলেজ আমাদের বুঝিয়ে দিবি, সেই সাথে আমাদের ৩ লাখ টাকা দিবি আর এই বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবি । কথা মত কাজ না করলে প্রানে পুরো পরিবারকে শেষ করে দিবো। আমরা পুরো পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছি। এদের ভয়ে এলকা নিরীহ মানুষ কোনো প্রতিবাদ করার সাহস দেখায় না।বিষয়টি আপনারা সঠিকভাবে তদন্ত করে সংবাদ লিখবেন বলে আশাকরি।
পরিবার সূত্রে আরো জানা যায়, এমন একটি ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগী মোঃ খালেদ,৩/৭,বাড়ি নং ৩১৩, মাও ঃ মোবারক আলী মহল এর মায়ের সূত্রে মালিক তাহার সাথে কথা বললে তিনি জানালেন, ২০০৫ সালে আমাদের বাড়ির পূর্ব পাশে ৩ শতাংশ দলিল মোঃ আব্দুল হান্নানের নামে দান পত্র দলিল রেজিষ্ট্রি করে নেয়।এরপর ২০০৮ সালে সেই জমি সে ফেরৎ দিবে মর্মে ১লক্ষ ২০ হাজার টাকা তাহার বড় দুলাভাই মাওলানা মোবারক আলীর কাছ থেকে বুঝিয়া নেয়। পরবর্তীতে সেই জমি সে রেজিষ্ট্রি করিয়া দেয় না এবং টাকা আত্মসাৎ করে। এ বিষয়ে পারিবারিকভাবে শালিস হয়েছে যাহা থানা পর্যন্ত গড়িয়ে কোর্টে মামলায় চলমান রহিয়াছে।২০১২ সালে ঐ জমির টাকা আত্মসাতের প্রতারনা মামলার আসামী মোঃ আব্দুল হান্নান অন্য ব্যাক্তির কাছে গোপনে ২০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে তাকে দখল বুঝিয়া দেয়। তিনি সেই জমিতে ক্রয়কৃত সম্পত্তির বলে জমিতে রয়েছে। যাহার হোল্ডিং নং ৩/৭/এ, দলিল কৃত মালিক মোছাম্মৎ হোসনে আরা বেগম। প্রতারক হান্নান এখানেই ক্ষান্ত হননি। তিনি ২০২০ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর মোঃ নুরুল ইসলামকে হেবাবিল এওয়াজ দলিল করে দেন । অথচ দলিল গ্রহীতা নূরুল ইসলাম দলিল দাতা হান্নানের কোন নিকট আত্মীয় হয় না। সে ক্ষেত্রে কিভাবে হেবাবিল এওয়াজ দলিল করতে পারেন। এখানেও তথ্য গোপন করে দলিলটি করা হয়।
এ বিষয়ে এলাকাবাসী অনেকেই সাংবাদিকদের জানালেন, খন্দকার মাও ঃ মোবারক আলী একজন দ্বীনি মানুষ, প্রবীন আলেম। তিনি ফরিদপুরে সর্ব মহলে পরিচিত একজন ভালো মানুষ।দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি এই বাড়িতে বসবাস করছেন। মাও ঃ মোবারক আলী মহলটি অনেক পুরোনো । এখানে দলিল রেজিষ্ট্রির ঘটনাগুলো এক ধরনের প্রতারনা। এটা সঠিক তদন্ত করলে সত্যতা বেড়িয়ে আসবে। বেশ কয়েকবার এই বাড়িটি জবর দখলের পায়তারা করেছে। এলাকার স্থানীয় অনেকেই বিষয়টা জানে।
গত ২৭/১২/২০২০ইং তারিখে বিকাল ৪টার দিকে হান্নান এবং নুরুলইসলামের নেতৃত্বে কিছু লোক বাড়ি দখলের জন্য গেট , দড়জা ভাংচুর করে এবং নতুন একটি হোল্ডিং নাম্বার বাড়ির দেওয়ালে টানিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের সাথে দেখা করে বাড়ি জবর দখল এবং ভাংচুরের ভিডিও সহ মৌখিক অভিযোগ দেয়া হয়েছে পরিবারের পক্ষে। সে মোতাবেক পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে বলেন। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে কোতয়ালী থানা পুলিশ দখলকৃত বাড়ির তালা ভেঙ্গে প্রকৃত মালিককে ঘড় বুঝিয়ে দেয়।
গত ২০ জানুয়ারী ২০২১ তারিখে কোতয়ালী থানার এস আই আনিচুর রহমান দুই পক্ষকে থানায় ডেকে একটি শালিস করার আয়োজন করেছিলো। যেহেতু বাড়ির বিষয়টি আদালতে মামলায় চলমান তাই থানায় বসা হয়নি বলে জানান মোছাঃ খোদেজা বেগম।
এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার এস আই আনিচুর রহমান এর সাধে সাংবাদিকরা কথা বললে তিনি জানান, আমি শান্তি প্রতিষ্টার জন্য দুই পক্ষকে ডেকেছিলাম। যেহেতু বিসয়টি আদালতে মামলা চলমান তাই এক পক্ষ শালিসে বসতে চায়নি। এটা তাদের বিষয়।
একই বাড়িতে দুইটি হোল্ডিং নাম্বার থাকার বিষয়টি নিয়ে ফরিদপুর পৌরসভায় গেলে সেখানে কেউ এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। কারন এই হোল্ডিং নাম্বার যারা দিয়েছে তার দায়ভার নব নির্বাচিত প্যানেল নিতে চায় না।
বাড়ি দখলের পর থেকে মোছাম্মৎ খোদেজা বেগম তার পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান।