বিশেষ প্রতিনিধি:- ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানার চর ঝাউকান্দা ইউনিয়নের পাঁচমিশালী ফসলী জমির মাঠ দখল করে সেখানে গড়ে তুলেছে অবৈধ ড্রাম চিপনী ইট ভাটা। জানা যায়, অত্র এলাকার কৃষকদের তীব্র আপত্তি থাকা সত্বেও ঝাউকান্দা ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন মৃধার নেতৃত্বে চলছে এই ইট ভাটা।
সরেজমিনে ঝাউকান্দা চরে গড়ে ওঠা ইট ভাটায় গেলে বিষয়টির সত্যতা মিলেছে। ভাটা স্থলে গিয়ে দেখা যায় ইট ভাটার সব কিছুই অনিয়মতান্ত্রিক। ভাটা নির্মানে মানা হয়নি বাংলাদেশ সরকারের কোনো নিয়ম। জানাযায়,এখানে ফসলী জমি নষ্ট করে অন্যের জায়গা জবর দখল করে ইট ভাটা নির্মান করেছে। আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গল দেখিয়ে ইট ভাটায় ড্রাম চিপনী ব্যবহার করছে।দেশীয় বিভিন্ন গাছের খড়ি দিয়ে ইট পোড়ানোর জ্বালানী ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব তথ্য জানার জন্য ভাটায় কর্তৃপক্ষের কাউকে খুজে পাওয়া যায়নি।
মুঠো ফোনে কথা হয় ভাটার মালিক পক্ষের একজন যিনি ঐ ইউনিয়ন ঝাউকান্দার চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন মৃধার সাথে। তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমি ২০২০ সালে ইট ভাটা নির্মানের জন্য অনুমোদন পেতে ফরিদপুর জেলা ফায়ার সার্ভিস অফিস ও ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করেছি, তারা এখনও কোনো অনুমতি দেয়নি। তবে আমি সরকারী আয়কর পরিশোধ করেছি। ভাটা চালাচ্ছি কোনমতে, তবে এটাতো নদীর পাড়ে সমস্যা কোথায় ?
ভাটায় কর্মরত শ্রমিক অনেকেই নাম না প্রকাশ করার শর্তে সাংবাদিকদের জানালেন, ২ বছর ধরে এই চরে ইট ভাটা নির্মান এবং ইট পোড়ানের কাজ চলছে। ইট ভাটার চারপাশে পাঁচ মিশালী ফসলের বিশাল মাঠ, মাঝখানে এই ভাটা চলছে। ড্রাম চিপনী ব্যবহার করায় পরিবেশের জন্য মারাত্বক হুমকী ভাটার কালো ধোয়ায় ফসলের মাঠের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে আর ফসলের মাঠে অবাধে ট্রাক চলাচলে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে জমি।
এ বিষয়ে ইট ভাটার আশে পাশের ফসলী জমিতে কাজ করা কৃষকরা সাংবাদিকদের জানান, ঝাউকান্দা চরে মুলত পাঁচ মিশালী ফসল উৎপাদন হয়। এখানে জমির মাঝখানে গড়ে তুলেছে ইট ভাটা। এই ভাটার কারনে আমাদের ফসলী জমির অপূরনীয় ক্ষতি হচ্ছে। শুরু থেকেই ইট ভাটার বিষয়ে আমাদের আপত্তি সত্বেও তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এ এইচ এম রাশেদ এর সাথে কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ড্রাম চিপনী দিয়ে ইটভাটা করার বিষয়ে আমার জানা নেই। আর ড্রাম চিপনী যুক্ত ইটভাটার কোনো অনুমোদন দেয়া যায়না। আপনারা তথ্য দিলেন আমি ঘটনাস্থল তদন্ত করে দেখবো।
এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স অফিসের লাইসেন্স ইন্সপেক্টর মোঃ তানভীর আলমের সাথে কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের জানান,আমাদের এখান থেকে ড্রাম চিপনী দিয়ে নির্মান ইট ভাটার কোনো অনুমোদন আমরা দিতে পারি না। এমন একটি ইট ভাটার বিষয়ে আমাদের কেউ অভিযোগ দেয় নাই। আপনাদের দেয়া তথ্য নিয়ে আমরা তদন্ত করবো। অবৈধ হলে আমরা অফিসিয়ালী ব্যবস্থা নিবো।
এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খলিফা কামালের সাথে কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ইট ভাটা নির্মানের একটা আইন আছে এই আইনের মধ্যে যদি কারো ইট ভাটা না পড়ে তাহলে আমরা আমাদের ইট ভাটা মালিক সমিতির সদস্য হিসেবে তাকে অন্তভুক্ত করতে পারি না। আপনারা যে ইট ভাটার কথা বলছেন তা আমাদের নিয়মের বাইরে থেকে ড্রাম চিপনী দ্বারা ইট উৎপাদন করছে বলে জেনেছি তাই তার বিষয়ে আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই।
আধুনিক প্রযুক্তির এই সময়ে কৃষকের পাঁচ মিশালী ফসলী জমির উপর পুরোনো মডেলের যাহা পরিবেশের জন্য মারাত্বক হুমকী ড্রাম চিপনী ইটভাটা নির্মান এবং সেই ভাটায় গাছের কাঠ জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা কতটা আইন সম্মত ? এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকাবাসী সহ কৃষকদের দাবী অবৈধ এই ইট ভাটা উচ্ছেদ করে ফসলী জমিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে পরিবেশকে দুষনমুক্ত করতে কর্তৃপক্ষ ভুমিকা রাখবে।