আহসান হাবীব
এক অদৃশ্য ভাইরাস হঠাৎ সর্বশক্তিমান হয়ে পুরো পৃথিবীকে তছনছ করে দিলো।
আধুনিক বিশ্বের বুদ্ধিমান বলে প্রচলিত মেধাবী মানুষকে এক সারিতে এনে এক সাথে অবিশ্বাস্য ভাবে গৃহবন্দি করে আটকিয়ে দিলো।
বিনা অস্ত্রে, বিনা যুদ্ধে জাদুকরের ভেলকির মতো দখল করে নিলো গোটা বিশ্বকে।
যা মানুষের কল্পনাতীত ছিলো না, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির শীর্ষে অবস্থান করেও মানুষ আজ একবারে চূড়ান্ত ধ্বংসের পর্যায়ে অসহায়।
শুধু অসহায়ই নয়; নির্বিকার। ক্ষুদ্রাতিত ক্ষুদ্র করোনা নামক ভাইরাসের এক চেটিয়া মাস্তানির কাছে,
ভায়োলেন্সের কাছে পরাজিত পৃথিবীর সেরা-শ্রেষ্ঠ মানুষ। র্নিবিকার!
কোভিড-১৯ নামক অদ্ভূত এই ভয়াবহ ভাইরাসের ভয়ে মানুষের ভালোবাসা বিলুপ্ত।
প্রিয় স্বজনের লাশ ছুঁতে পারেনা।
শেষ বারের মতো মমতায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে পারেনা।
ঠিক মতো শেষকৃত্য সমাপ্ত করতে পারছেনা।
মায়ের লাশ ফেলে দিচ্ছে জঙ্গলে,
বাবার লাশ হাসপাতালে রেখে মানুষ পালাচ্ছে,
সন্তানের লাশ না দেখেই তুলে দিচ্ছে উদ্ধার কর্মীদের গাড়িতে।
আজ মানুষ কতটা নিরুপায়?
ভালোবাসায় বন্ধুকে বুকে জড়িয়ে নিতে পারছে না,
প্রিয়জনকে আলিঙ্গন করতে পারছে না,
আদর করে চুম্বন করতে পারছে না।
মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস নিয়ে সামাজিক দূরত্বে দিশেহারা হয়ে কারাবাসের মতো গৃহবন্দি।
যেনো চোখ-মুখ বাঁধা, হাত বাঁধা।
লিক্যুইড দিয়ে হাত ধোয়, মানে রক্তমাখা হাত থেকে পাপ ধোয়।
হ্যাঁ; পাপ তো বটেই।
পৃথিবী, পরিবেশ এবং প্রকৃতির প্রতি মানুষ তো আর কম অবিচার করেনি;
কম অন্যায় করেনি। যার ফলশ্রুতিতে বিশ্ব আজ বিপর্যস্থ!
দিকে দিকে লাশ আর লাশ;
লাখের পর লাখ লাশ শুধু লাশ!
লাশের উৎসবে ভিলেনের ভূমিকায় নৃত্য করছে কোভিড-১৯করোনা।
আর মানুষ ভাষাহীন হয়ে মৃত মাছের দৃষ্টিতে সেই সব অস্বাভাবিক দৃশ্য তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
আর আমরা কবিতা লিখছি- করোনা কালের কবিতা, লকডাউনের কাব্য।
এই সব কবিতায় আছে করোনা কালের জীবন-যাপনের চিত্র;
আছে আমাদের গ্লানি ও বেদনার কথা,
আছে মানুষের ব্যর্থতা আর পরাজয়ের কথা;
আছে বিপর্যয় আর অসহায়ত্বের নীরব আর্তনাদ!
পৃথিবীর সব কিছু স্বাভাবিক হলে অথবা পৃথিবীর নতুন সংস্করণ হলে,
এই ঘন আধারের পর আলোকিত ভোর এলে আমরা আবার আগের মতো পাখিদের সাথে, প্রকৃতির সাথে মিশবো।
আমার শহর, তোমার টাউন
থমথমে সব লক ডাউন!
আমার টাউন, তোমার শহর
নেই কো কোনো গাড়ির বহর!
তোমার গ্রাম আর আমার পাড়া
গৃহবন্দি, দিশেহারা!
তোমার পাড়া, আমার গ্রাম
নীরব, নেই তো ধ্রুম-ধ্রাম!
আমার দূরদেশ, তোমার বাড়ি
নিষিদ্ধ এক নোটিশ জারি!
আমার বাসা, তোমার দেশ
জানি না গো- সর্ব শেষ!!
ভূমিদস্যুর ডানহাত ছিলাম।
স্বাক্ষী দিয়েছি মিথ্যে মামলায়।
চুরি করেছি পুকুর,
জল-বায়ু, বাতাসের বিরুদ্ধে ছড়িয়েছি বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড।
পিয়নকে বেতন না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়ার মতো অপরাধের পাহাড়
বন্ধুকে ফাসিয়ে দিয়েছিলাম গোপনে, মাটি ক্ষতাক্ত করার অনুশোচনা
এবং বৃক্ষ কর্তনের জন্য আজ আমি মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী।
হে মহামান্য, মানুষের যাবতীয় অপরাধের জন্য আমি শর্তহীন ক্ষমাপ্রার্থী।