আহসান হাবীব লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
সাংবাদিক নির্যাতন বিরোধী সংগঠন।
দেশের অন্তত ২৩ টি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছে। এই মাদ্রাসাগুলোর প্রাঙ্গণে হেফাজতের নেতা এবং মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কওমি মাদ্রাসার সিনিয়র ছাত্ররা জড়ো হয়েছিলেন মাদ্রাসাগুলোর ভবিষ্যৎ এবং মাদ্রাসা বন্ধ হলে করণীয় নিয়ে তারা আলোচনা করেন। এই আলোচনায় তারা সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন যে, তাদের মাদ্রাসাগুলো যেন বন্ধ না করে দেওয়া হয় এবং এই সমাবেশগুলোতে তারা বলেছে যে, হেফাজতের আন্দোলনে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা আর অংশগ্রহণ করবে না। এইসব সমাবেশগুলোতে হেফাজতের কঠোর সমালোচনা করা হয় এবং কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদেরকে হেফাজতের নেতারা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ব্যবহার করেন এরকম অভিমতও ব্যক্ত করা হয়।
দেশের আবাসিক কওমি মাদ্রাসাগুলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। করোনা ঝুঁকি মোকাবেলার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা সেটি তদারকির জন্য ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই চিটিতে আবাসিক কওমি মাদ্রাসাগুলোর তালিকা প্রণয়ন এবং সেখানে সরকারি নির্দেশনা কার্যকর হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানে কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা নিজেরা আলাপ-আলোচনা করছেন এবং কর্মী সমাবেশের আদলে তারা বৈঠক করে সরকারের কাছে মাদ্রাসাগুলো বন্ধ না করার অনুরোধ করছেন। এই অনুরোধের পাশাপাশি তারা কিছু কিছু বক্তব্য, মন্তব্য করেছেন।
ঢাকা এবং কেরানীগঞ্জের ১০টি মাদ্রাসায় এরকম মাদ্রাসা ছাত্রদের কর্মীসভার কথা বলা হয়। কর্মীসভা না বলে তারা এটাকে করণীয় নিয়ে আলোচনা সভা বলছেন। একজন মাদ্রাসার ছাত্র বলেছে যে, এই রমজান মাসে তাদের মাদ্রাসাগুলো চলার মত অর্থকরি আসে। বিভিন্ন মানুষ দান-খয়রাত করেন। এই অবস্থায় যদি মাদ্রাসাগুলো বন্ধ থাকে তাহলে তাদের জন্য একটা সংকট তৈরি হবে। এই প্রেক্ষিতে ঢাকা এবং কেরানীগঞ্জের যে ১০ টি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বৈঠক করেছেন সেই বৈঠকগুলোর ব্যাপারে হেফাজতের নেতৃবৃন্দকে অগোচরে রাখা হয়েছে এবং হেফাজতের নেতৃবৃন্দ এ বৈঠকগুলোর ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
নেতৃবৃন্দ মাদ্রাসার সিনিয়ার ছাত্ররা এই বৈঠকের আলোচনা করেন এবং এই বৈঠকে তারা হেফাজতের সাম্প্রতিক আন্দোলন এবং অতীতের আন্দোলনের তীব্র সমালোচনা করেন। মাদ্রাসার ছাত্ররা বলেন যে মাদ্রাসার এতিম বাচ্চাদেরকে ব্যবহার করে হেফাজতের নেতারা দেশে অশান্তির সৃষ্টি করেছে এবং এখানে বদনাম হচ্ছে মাদ্রাসাগুলোর। আর এই কারনেই এই ১০টি মাদ্রাসায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, তারা ভবিষ্যতে হেফাজতের ডাকা কোনো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবে না। শুধু ঢাকায় নয় চট্টগ্রামেও একাধিক মাদ্রাসায় একইরকমের বৈঠক হয়েছে। এরকম বৈঠকের খবর পাওয়া গেছে বরিশাল এবং কুমিল্লাতেও। একটি সূত্র বলছে যে, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ঘটনার পর এখন নিজেরা একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে এবং তাদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব, নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে তারা একটি ঐক্যমতের জায়গা তৈরি করেছে। অতীতে দেখা গেছে হেফাজতের মাদ্রাসার শিক্ষকরা যা বলতেন সেটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করাই ছিলো মাদ্রাসার ছাত্রদের একমাত্র কাজ। আর মাদ্রাসার শিক্ষকদেরকে নিয়ন্ত্রন করা শুরু করে হেফাজত।
২০১৩ সালের মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরকে এরকমভাবে লেলিয়ে দেয়া হয়। এবার ২৬ এবং ২৭ মার্চে একই রকম ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এর ফলে অনেক মাদ্রাসার ছাত্র নির্যাতিত হচ্ছে, অনেকে মারা যাচ্ছে। কিন্তু এরপরেও হেফাজতের নেতারা তাদের কোনো খোঁজখবর নিচ্ছে না। এ কারণেই মাদ্রাসার বড় ছাত্ররা মিলিত হয়ে এরকম একটি অবস্থান গ্রহণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে হেফাজতের নেতারা মনে করছেন যে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরকে এখন সরকার একটি মহল তাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে দিচ্ছে এবং মাদ্রাসাগুলোতে সরকারি নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে হেফাজতের নেতাদের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। এটি একটি অশুভ পরিণতি বলেও হেফাজতের নেতারা মনে করছেন।