কাজী সেলিম গাইবান্ধা থেকেঃ
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে বহু ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ব্যাপক হারে পুকুর খননের অভিযোগ উঠেছে। খননের পর এসব পুকুরের মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। আবার মাটিবহনকারী ভারী ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টরের অবাধ চলাচলে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক।
এতে অভিযোগ উঠেছে ভূমি আইন উপেক্ষা করে অবাধে পুকুর খনন করায় দিনদিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমির পরিমাণ। তবে ফসলি জমির মাটি লোপাট হলেও এখতিয়ার না থাকায় কৃষি দপ্তর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নের দিলালপুর (শ্রীপুর), আলীপুর, রাজাহার ইউনিয়নের রাজাহার, বানেশ্বর, কামদিয়া ইউনিয়নের দিঘিরহাট, চক মানিকপুর, মাখলান, তুলট ও শাখাহার ইউনিয়নের জাংগালপাড়া (ইসলামপুর), মাহিমাগঞ্জের পুনতাইড়সহ বিভিন্ন এলাকায় পুকুর খননের হিড়িক পড়েছে। এই খননের মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। শুধু তাই নয়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমির টপসয়েল কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। টপসয়েল কাটায় বিনষ্ট জমির উর্বরা শক্তি।
উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় কৃষি জমির পরিমাণ ৩৬ হাজার ৮০০ হেক্টর। এর মধ্যে চার ফসল ১ হাজার ৫০ হেক্টর, তিন ফসলি জমি ১১ হাজার ৩৬৫ হেক্টর, দুই ফসলি ২২ হাজার ৫৭০ হেক্টর ও এক ফসলি জমির পরিমাণ ১ হাজার ৮১৫ হেক্টর। এছাড়া নিচু মানের ২০০ হেক্টর জমিতে ১ থেকে ২ ফসল আবাদ হয়ে থাকে।
দিঘিরহাট এলাকার পুকুর মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমার সঙ্গে কথা বলে কাজ হবে না। মাটিগুলো ইটভাটায় বিক্রি করা হয়েছে। তারাই সবাইকে ম্যানেজ করবে। আপনারা তাদের সাথে কথা বলুন।
মো. তোহা নামে আরেক পুকুর মালিক বলেন, জমিগুলো উঁচু ছিল। তাই কিছু মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা হয়েছে। পুকুরের খননের জন্য অনুমতি নেয়ার বিষয়টি তিনি জানেনই না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি জানান, কোনো কোনো এলাকায় এস্কেভেটর (ভেকুমেশিন) আবার কোনো এলাকায় শ্রমিক লাগিয়ে মাটি কেটে ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টরের সাহায্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব মাটি খননে কোন অনুমোদন নেয়া হয়নি। জমির মালিককে অর্থের লোভ দেখিয়ে কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে টপসয়েল। দিনের বেলায় চুটিয়ে চলছে খনন কাজ। এতে করে দিনদিন কমছে ফসলি জমির পরিমাণ। এভাবে চলতে থাকলে আগামিতে শস্যভান্ডারের উপাধি হারাবে এ উপজেলা। পুকুর খনন বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার সৈয়দ রেজা-ই-মাহমুদ বলেন, পদ থাকলেও এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। উপজেলার প্রশাসনিক সকল ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে নির্বাহী অফিসারকে। আপনারা তার সঙ্গে কথা বলুন।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ হোসেন বলেন, যারা অনুমতি ছাড়া পুকুর খনন করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।