কাজী সেলিম গাইবান্ধা থেকেঃ
গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাাপুর উপজেলার ধাপেরহাটে হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী বান্নির মেলা। ৪ তরিকার পীর-দরবেশ-আউলিয়ারা এখানে একত্রিত হয়ে বৈঠক করতো বলে এ স্থানের নাম করণ হয়েছে পীরের হাট। একটি পবিত্র স্থান এই পীরের হাট। এলাকার প্রবীন লোকজন অভিমত উক্ত স্থানে ৪১ জন পীরের মাজার রয়েছে। মহামারি করোনার কারনে দু’বছর এ মেলা বসে নাই। এবার ধাপেরহাট ইউনিয়নের পীরের হাটে পীরের পুণ্যভূমিতে বসেছে ৪৩ তম এই ঐতিহ্যবাহী বান্নির মেলা। মেলা উপলক্ষ্যে পীরের হাট ও ধাপেরহাট এলাকার আশপাশের গ্রামগুলোতে মহা মিলন মেলা ও উৎসবমুখর পরিবেশ। এই মেলায় বহু দূর দূরান্তের আত্মীয়- স্বজনের মধ্যে দাওয়াত দেওয়ার হিড়িক পড়ে। এসব গ্রামের মানুষদের আত্মীয় স্বজন বিশেষ করে মেয়ে ও নতুন বধূর নাইওরী বধুদের আত্মীয় স্বজনদের অন্ততঃ এক সপ্তাহ আগেই নিমন্ত্রণ করে আনা হয়।
১৬ এপ্রিল সকাল থেকে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের ধাপেরহাট বাসস্ট্যান্ড হতে আধা কিলোমিটার পূর্বদিকে বসেছে এ মেলা। ইতিমধ্যে কয়েকদিন আগ থেকেই এ মেলায় জমায়েত হয়েছে কয়েক হাজার দর্শনার্থী। মেলায় বিভিন্ন পণ্যের বাহারি সাজিয়ে বসেছে দোকানীরা। মনোহারি, পাকা মিষ্টি, দই-খই, হুরুম-বাতাসার, মসলার দোকান, রং-বেরঙ্গের ডালা, কুলা, বেত শিল্পের তৈরি গ্রামীন জিনিসপত্র, রসুন, কাঠের আসবাবপত্র, পুতুল নাচ, নাগরদোলা, ঘুড়ি এবং কামারের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে বসে গেছেন মেলা প্রাঙ্গনে। লক্ষাধিক মানুষের সমাগমে মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গন। ঐতিহ্যবাহী এ মেলাটি সফল করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে। যাতে করে কনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
পীরের হাট মাজার কত বছর আগে স্থাপিত হয়েছে এমন কোন সঠিক দিন-তারিখ খুজে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, প্রায় ৩ একর খাস জমির উপর পীরের হাট অবস্থিত। এখানে জ্বীন, পরীর আস্তানা, একটি মসজিদ, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি ঈদগাহ মাঠ, একটি দরগা- মাজার শরীফ, শতবর্ষ বিশাল আকারের কয়েকটি বট গাছ ও মাঝখানে রয়েছে একটি কেরামতি পুকুর। মানুষের রোগ নিরাময়ের ঔষধ হিসাবে যুগ যুগ ধরে এই পুকুরের পানি পান করে আসছেন। পানির রং ঘোলা হলেও কেউ তা ঘৃণার চোখে দেখছেন না। ছিমছাম পরিচ্ছন্ন এই পীরের হাটে অনেকেই আসেন অবকাশ সময় কাটাতে। এক সময় এখানে হাট-বাজার বসতো, সময়ে ব্যবধানে তা বিলীন হয়ে গেছে। এখন বছরে চৈত্র মাসের শেষে অষ্টমির পরে বৈশাখের প্রথম শনিবার একদিনের এই বান্নির মেলা বসে। লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে এই মেলায়। এ ছাড়াও বছর শেষে মহররম মাসের ১০ তারিখে ওরস অনুষ্ঠিত হয় এখানে। ওরসে শত শত জটাধারী, দরবেশ, সন্ন্যাসীর আগমন ঘটে।