গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধার সাঘাটায় উপজেলায় সরকারি অনুমোদন বিহীন মেসার্স কিএমকে-২ ব্রিকস নামে ইটভাটা চালু করে। উক্ত ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়ায় কৃষকের ৫০ বিঘা জমির বোরোধান পুড়ে গেছে। অনেক স্বপ্নের ফসল হাড়িয়ে হতাশায় কৃষক । সরকারি অনুমোদন ছাড়া ইটভাটাটি চলে আস প্রায় ৭ বছর থেকে। প্রতি বছরেই কৃষকদের ফসলের ব্যপক ক্ষতি হলেও ইটভাটা কতৃপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় কৃষকরা প্রতিবাদকরার সাহস পাননি। ঘটনাস্থান পরিদর্শন করেছেন অনেক বার এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কৃষিকর্মকর্তাসহ জনপ্রতিনিধিরা। শুধু আশ্বাস দিয়েই গেছেন।
সাঘাটা উপজেলার টেপাপদুমশহর গ্রামের কৃষক ও কৃষি শ্রমিক সিরাজুল ইসলাম প্রতিবেদককে কষ্টের কথা বলেন সংসারে অনেক অভাব অনাটনের মধ্য দিয়ে ধারদেনা করে দুই বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। অনেক স্বপ্ন তার ঘরে ফসল আসলে ফিরবে সংসারে সুদিন। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে পুড়ে গেছে ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে। ধান পাকার আগেই পাতা ও শীষ পুড়ে গেছে তার দুই বিঘা জমির সব ধান। ধানের গাছগুলো বিবর্ণ রঙ ধারন করেছে। সিরাজুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন কি ভাবে চলবে সংসার? গত ৭ বছরে এই ইটভাটা এলাকার অনেক ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে। এবছর এই গ্রামে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ বিঘা জমির ধান পুড়ে গেছে ।
সিরাজুল ইসলামের মতো এই গ্রামের ময়নুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, মহি বেগমসহ প্রায় শতাধিক বোরোচাষীর একই অবস্থা । বোরোচাষী হাসিবুর ইসলাম বলেন ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসের কারনে আমার ৫ বিঘা জমির বোরোধান সম্পুর্ণ পুড়ে গেছে । এছাড়াও আম-কাঠাল, চালতা, জলপাই গাছসহ বাশঝাড়ের সব পাতা পুড়েগেছে। এতে আমার কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে । আমরা এই ইটভাটাটি বন্ধে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
কৃষক আব্দুল মালেক বলেন ইট ভাটার কারনে এই গ্রামের ৫০/৬০ বিঘার জমির ধান পুড়ে গেছে। কিন্তু ভাটার মালিক বিষয়টি নজরে না নিয়ে কৃষকদের ক্ষতি পুরনের নামে তাল বাহনা করে আসছে। আমরা ক্ষতি পুরন চাইনা । এই ইটভাটাটি বন্ধ করতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি ।
কাশেম উদ্দিন নামের এক কৃষক জানান, এই ইটভাটাটি স্থানীয় পদুমশহর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার রফিকুল ইসলাম দুদুর জমিতে অবস্থিত । কৃষি জমিতে ইটভাটা করার নিয়ম না থাকলেও এই ইউপি মেম্বার প্রভাবখাটিয়ে তার জমিতে ইটভাটা তৈরি করে গত ৭ বছরে এই গ্রামসহ আশ পাশের কয়েকটি গ্রামের কৃষি খাতের ব্যপক ক্ষতি করলেও আমরা ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারিনা। নিজ জায়গায় ইটভাটার ফলে কৃষকদের ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে পদুমশহর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার রফিকুল ইসলাম দুদু বলেন, ইটভাটাটি আমার জায়গায় গত ১০ বছর থেকে চলছে আমি ভাড়া দিয়েছি আমি মালিক না। মেসার্স কিএমকে-২ ব্রিকস ইটভাটার ভাটার মালিক গাইবান্ধার শহরের বাসিন্দা আলহাজ মোঃ মনির হোসেন মনির। ইটভাটার কারনে কৃষকদের যা ক্ষতি হয়েছে মালিক ও কৃষকদের নিয়ে আলোচনা করে ক্ষতিপুরন দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
অভিযুক্ত মেসার্স কিএমকে-২ ব্রিকস ইটভাটার মালিক আলহাজ মোঃ মনির হোসেন মনিরের সাথে যোগাযোগ করলে তাকে পাওয়া যায়নি । এই ইটভাটার দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার বিদুৎ মিয়াও সাংবাদিকের ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হয়নি।
পদুমশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মফিজুল ইসলাম বলেন, এই বিষয়ে কৃষকরা আমাকে জানিয়েছে । আমি বিষয়টি কৃষি অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি। কৃষকদের ক্ষতিপুরনসহ ইউভাটারি বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে কৃষকরে পাশে থাকবো ।
এই বিষয়ে সাঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: সাদেকুজ্জামান বলেন, আমি ঘটনা স্থল পুরিদর্শন করেছি । ইটাভাটাটির কারণে কি পরিমাণ জমির ক্ষতি হয়েছে তার জরিপ চলছে। বিষটি নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলেছি। এই উপজেলার কোন কোন ইটভাটার অনুমোদন নাই সেই সব ইটভাটা বন্ধের বিষয়ে উর্ধতন কতৃপক্ষ সিন্ধান্ত নিবেন।
সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, জেলা প্রশাসক মহাদয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইটভাটটি বন্ধের সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে । ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নামের তলিকা তৈরি করা হচ্ছে। এপর্যন্ত ৩৮ জন কৃষকের তালিকা এসেছে । আমরা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপুরনের ব্যবস্থা করবো