স্টাফ রিপোর্টারঃ বাছেদ হোসেন শান্ত
পাখিদের অর্থনৈতিক গুরুত্বের কথা বলে শেষ করা দুরূহ। আমরা দৈনন্দিন জীবনে যে ডিম, মাংস ইত্যাদি আহার করে থাকি তা আসে প্রধানত: খামারজাত পাখি থেকেই।
পাখি ইঁদুর এবং অন্যান্য কীটপতঙ্গ খেয়ে আমাদের শস্যের উপকার করছে এবং একই সাথে নোংরা আবর্জনা খেয়ে আমাদের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন করে দিচ্ছে। শকুন, কাক, চিল না থাকলে গ্রামাঞ্চলের একটি প্রাণীর মৃতদেহ থেকে পুরো এলাকার আবহাওয়া দূষিত হতে পারতো।
কোন কোন বীজ আছে সেগুলো কাক বা অন্য পাখির পরিপাকতন্ত্রের মধ্য দিয়ে ঘুরে না এলে তা থেকে উদ্ভিদ হবে না। আর এসব পাখিদের সাহায্যে দূর-দূরান্তের গাছের বীজ চলে আসে নতুন জায়গাতে।
ফুলের পরাগায়ণেও পাখিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষত: ছোট ছোট পাখিরা যখন এক ফুল থেকে অন্য ফুলে যায় তখন পালকে ফুলের পরাগরেণু মেখে নেয়। এভাবে পরাগায়ণ হয়ে ফুল থেকে ফল হয়। চড়ুই বা অন্য পাখিরা খেতের ধান খেয়ে আদৌ কোন ক্ষতি করে কিনা, বা কতটুকু ক্ষতি করে সেটা নির্ণয় সাপেক্ষ। বাংলাদেশে চড়ুইসহ অন্যান্য পাখি কেবল ধানই খায় না, ধানের ক্ষতিকারক বিভিন্ন কীটপতঙ্গও খেয়ে থাকে। সুতরাং এদেরকে শস্যের ক্ষতিকারক বলা যাবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। এভাবে আমাদের সঙ্গে অত্যন্ত গভীরভাবে জড়িত হয়ে আছে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি।
পাখি আমাদের প্রতিবেশের (Ecosystem) অংশ এবং এদের সংখ্যা হ্রাস পেলে তার প্রভাব আমাদের উপর পরবে।
আমাদের দেশের হাওর-বাওর ও চরাঞ্চলে পরিযায়ী পাখি দেখার জন্য হাজার-হাজার দেশি-বিদেশী পর্যটকদের আগমন ঘটে থাকে। পরিবেশ পর্যটনকে উৎসাহিত করার জন্য পরিযায়ী পাখি ও আবসস্থল সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
পাখি মৃত্যুর প্রধান কারণ
জাতিসংঘের UNEP (United Nation Environment Programme), CMS (Convention on the Conservation of Migratory Species of Wild Animals) ও অন্যান্য সংস্থার উদ্যোগে ২০০৬ সাল থেকে প্রতি বছর ০৯-১০ মে তারিখে পরিযায়ী পাখি দিবস (World Migratory Bird Day) পালিত হয়ে আসছে। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সমীক্ষামতে প্রতিবছর মারা যাওয়া পাখির প্রধান কারণ হলো:
(পাখির আবাসস্থলে তেল উপচে পড়া, মাছ ধরার জাল/ফাদ ইত্যাদি), ঘর-বাড়ি এবং বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরী বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন, বিড়াল, মোটরগাড়ি, কিটনাশক, মোবাইল ফোন টাওয়ার, বায়ু টারবাইন, উড়োজাহাজ ইত্যাদি।
বাংলাদেশে পাখি মৃত্যুর সঠিক তথ্য ও উপাত্ত আমাদের হাতে নেই। তবে প্রতিদিন সারাদেশে বিভিন্ন জাতের পাখি শিকার ও নিধনের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই আমাদের দেশ থেকে পাখি বিলুপ্ত ও বিপন্ন হয়ে যাবে।
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২” অনুযায়ী-
দেশীয় পাখি বা পরিযায়ী পাখি শিকার, হত্যা, আটক, ক্রয়-বিক্রয় বা পরিবহন সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা ২ (দুই) লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ড।