সাগর চন্দ্র রায় নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। উন্নয়নে বিশ্বে রোল মডেল। দেশ এখন উন্নয়নের ঐতিহাসিক দিকসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। তেনার ধারাবাহিকতায় টেক্সটাইল থেকে খানসামা আঞ্চলিক মহাসড়কের ২৭কিলোমিটারের উন্নয়ন কাজটি শেষ করে ২৯ মে ২০২০ইং, ঢাকার টিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েষ্টার কনস্ট্রাকশন। অতঃপর বুঝিয়ে দেন সড়ক বিভাগকে। আঞ্চলিক মহাসড়কটি দুই জেলা নীলফামারী ও দিনাজপুরের মধ্যে রয়েছে। নীলফামারী জেলা সদর দিয়ে টেক্সটাইল হয়ে খানসামা দিয়ে দিনাজপুর জেলায় প্রবেশ করেছে।
সদ্য সওজের সড়ক বিভাগের উনত্রিশ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত টেক্সটাইল খানসামা আঞ্চলিক মহাসড়ক। বর্তমানে সড়কটি দিয়ে বালু ও পাথর বহনকারী ট্রাক চলাচল করায় উন্নয়নের রোল মডেল রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। নীলফামারী সওজের সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রাস্তা দিয়ে অতিরিক্ত বালু ও পাথর বোঝাই ট্রাক চলাচল করায় সরকারের কোটি টাকা মূল্যে রাস্তাটি অল্প সময়ে নষ্ট হতে চলেছে। এতে যাতায়াতে দুর্ঘটনার পাশাপাশি ভোগান্তি পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকার প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা খানসামা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর তুলে অবাধে বিক্রি করছে রংপুর, সৈয়দপুর, বগুড়া, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায়। এতে সরকারের কোটি টাকা মূলে রাস্তাটি দিয়ে অতিরিক্ত বালু ও পাথর বোঝাই ট্রাক চলাচল করায় নষ্ট হচ্ছে আঞ্চলিক মহাসড়কটি। স্থানীয়রা জানায় বালু ও পাথর বহনকারী ট্রাক যাতায়াত করায় রাস্তায় দূঘটনাসহ অনাকাংক্ষিত ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এরই মধ্যে অনেকবার এলাকাবাসী বালু ও পাথর বোচাই ট্রাক আটক করে প্রশাসনের নজরে দিলেও কোন সুফল হয়নি।
সম্প্রতি চৌরঙ্গী বাজার সংলগ্ন তেলপাম্প স্থানে একটি বালু বোচাই ট্রাকের সাথে উত্তরা ইপিজেট যাত্রীবাহী অটোর সাথে মুখোমুখি সংঘষে দুইজন যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যায় এবং পাঁচজন যাত্রী গুরুত্বরো আহত হয়। এতে বালু বোচাই ট্রাকের সাথে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। তারপরও এসব অবৈধ বালু ও পাথরবাহী ট্রাকের প্রতি নজর নেই প্রশাসনের।
এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন রংপুর, সৈয়দপুর, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন রুটে হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ কয়েক হাজার ছোট বড়ো যানবাহনও চলাচল করে। এসব অবৈধ বালুবাহী ট্রাকের কারনে প্রতিনিয়ত রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটছে। এই রুটে নিয়মিত চলাচলকারী মাইক্রোবাসচালক জিকরুল ইসলাম জানান, এসব অবৈধ বালুবাহী ট্রাকের বেপরোয়া ভাবে গাড়ী চলানোর কারনে দুর্ঘটনার দিনদিন বাড়ছেই।
কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের বাসিন্দা জিয়াউর রহমান বলেন, রাস্তাটি আমাদের এলাকায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। সকের বাজারে একটি মসজিদ, এতিমখানা মাদরাসা, স্কুল প্রতিষ্ঠান রয়েছে অথচ রাস্তাটিতে কোন স্পিড ব্রেকার নেই। সড়কটিতে প্রতিদিনেই দূর্ঘটনাসহ অনাকাংক্ষিত ঘটনা ঘটছেই।
দিনাজপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সুনিতি চাকমা বলেন, আঞ্চলিক মহাসড়কের গাড়ী চলাচলের নিয়ম, ছয় চাকার পণ্যবাহী ট্রাকের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা (গাড়ির ওজনসহ) ১৫ টন এবং ১০ চাকার ট্রাকের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ২৩ টন। এর বেশি ধারণক্ষমতা চলাচলে রাস্তা অতিদ্রুত নষ্ট ও ফাটল ধরার সম্ভবনা। অতিরিক্ত বালু ও পাথর বোচাই ট্রাক চলাচলের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নীলফামারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকোশলী মুহাম্মাদ মনজুরুল করিম জানান, বালু ও পাথর বোচাই ট্রাক চলাচলের আমরা মৌখিকভাবে অনেকবার বারণ করেছি। অতপর বিষয়টি আমরা জেলার উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উত্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সড়কে প্রতিদিন ১০ চাকার ৪৫০ থেকে ৫০০টি ট্রাক চলাচল করে। এসব ট্রাকের ওজন ৫০ থেকে ৬০ টন। দিনাজপুর থেকে বিভিন্ন কাজের জন্য এসব ট্রাকে বালু ও পাথর নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ছয় চাকার ট্রাক যাতায়াত করে ৯৮০ থেকে ১ হাজারটি। এসব ট্রাকের বেশির ভাগই বালু ও পাথর বহন করে যেগুলোর ওজন সাধারণত ৪০ থেকে ৪৫ টন।
বায়স্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েষ্টার কনস্ট্রাকশনের এ্যাডভাইজার আদেল মাহমুদ জুয়েল, সাংবাদিকদেরকে বলেন, টেক্সটাইল থেকে খানসামা আঞ্চলিক মহাসড়কটির কাজ গত ৭মাস আগে সুন্দরভাবে সমাপ্ত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ওভারলোড গাড়ী চলাচলের কারনে রাস্তটি দ্রুত নষ্ট হতে চলেছে । #