শাহানাজ পারভীনঃ চট্টগ্রাম-উদ্বিগ্ন সন্দ্বীপ নদী সিকস্তি পুনর্বাসন সমিতি সহ অপরাপর সংগঠনের নেতৃবৃন্দ
গতকাল সন্দ্বীপের আজিমপুরে আটককৃত রোহিঙ্গাকে ব্যপক জিজ্ঞাসাদের পর থানায় সোপার্দ করেছেন আজিমপুরের চেয়ারম্যান জনাব আব্দুল আজিজ।
মোহাম্মদ হাছান নামে একজন রোহিঙ্গা গতকাল কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাস্প-৩ থেকে চট্টগ্রামের কুমিরা দিয়ে সন্দ্বীপ প্রবেশ করে। সন্দ্বীপ আসার পর হরিশপুর সুইস গেটে (প্রকাশ হতাল খাল) যাওয়ার পরিবর্তে ভুলক্রমে আজিমপুর ইউনিয়নে চলে আসে। ইফতারের পর আজিমপুর পাহাড়ের গো বাড়ি সংলগ্ন বেড়ীবাঁধে অত্র এলাকার শিবলু নামে একজন যুবককে জিজ্ঞেস করে হতালখালে কোন দিক দিয়ে যেতে হবে? শিবলু স্বাভাবিকভাবে লোকটিকে হতালখালে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিলে হঠাৎ পাশে থাকা আরেকজন লোক বলল লোকটিকে রোহিঙ্গার মতো লাগে, ওকে ধরে জিজ্ঞেস করেন। অতপর জিজ্ঞাসবাদে লোকটি ঠিকমতো ঠিকানা বলতে পারে নাই!! অনেকক্ষণ বেড়ীবাঁধে আটকে রাখার পর পুরো আজিমপুরে খবরটি ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক লোকজন জড়ো হতে থাকে। খবরটি পরিষদে আসার পর আজিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব আব্দুল আজিজ, লোকটিকে গ্রাম পুলিশ দ্বারা পরিষদে নিয়ে আসে। পরিষদে আনার পর এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ লোকটির সাথে কথা বলতে থাকে। নাম কী, বাড়ি কোথায়, বাবার নাম, কোথায় থেকে এসেছে,কার কাছে এসেছে, কি জন্য সন্দ্বীপ এসেছে, সন্দ্বীপ পরিচিত কেউ আছে কিনা ইত্যাদি প্রশ্ন করতে থাকে। লোকটি নিজের নাম মোহাম্মদ হাছান, পিতার নাম- নুরুল হক, মাতার নাম- ছেবন বাহার, বাড়ি কক্সবাজার সদর বাংলাবাজার, চেরাংঘাট, ওয়ার্ড ৪ বলল। কিন্তু এলাকার চেয়ারম্যান কে? ইউনিয়নের নাম কী? বাড়ির নাম কি? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে নাই! সন্দ্বীপ কেন এসেছে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তর দেয়, আমি নদীতে মাছ ধরার জন্য এসেছি, আমাদের এলাকায় কাজ নাই, তাই সন্দ্বীপ এসেছি কাজ করার জন্য। সন্দ্বীপ হতালখালে নাকি তার পরিচিত করিম মাঝি নামে একজন লোক আছে, তার সাথে কাজ করবে ইত্যাদি। এভাবে চলতে থাকে তার সাথে কথাবার্তা। লোকটি যখন খুব অসহায়ভাবে কথা বলতে থাকে, তখন উপস্থিত জনতা লোকটির প্রতি খুব মায়া করতে থাকে। লোকটি নিজেকে রোজাদার বলে দাবি করে। একপর্যায়ে উপস্থিত জনতা লোকটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়ার জন্য চেয়ারম্যান সাহেবকে অনুরোধ করেন, কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেব থানায় জানানোর কারণে তাকে ছেড়ে দেয়া তখন সম্ভব হযনি। ইতমধ্যে আজিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের রফিকুল ইসলাম দোপাদার তার ঘর থেকে ভাত এনে লোকটিকে খাওয়ায়। তার কথাবার্তায় ব্যাপক অসংলগ্ন থাকায় আজিমপুরের চেয়ারম্যান সাহেব বিষয়টি সন্দ্বীপ থানায় অবহিত করেন। বিষয়টি জানার পর সন্দ্বীপ থানা থেকে এসআই জুলফিকার সাহেবের নেতৃত্বে একটা টিম আজিমপুর পরিষদে আসেন। শুরু হয় পুলিশ প্রশাসনের জিজেজ্ঞাসাবাদ। জিজ্ঞাস্যবাদে লোকটি কক্সবাজারের যে ঠিকানা দিয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ করে করে পুলিশ সঠিক কোন খবর পায় নাই। অবশেষে, এসআই জুলফিকার সাহেব খুব কড়া ভাষায় কথা বলতে শুরু করলে উপায়ান্তর না দেখে সে স্বীকার করে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৩ থেকে এসেছে। পরিশেষে রোহিঙ্গা লোকটি বলল- স্যার আমায় থানায় নিয়ে চলেন। আপনাদের সাথে কথা আছে, এছাড়াও একটু আড়ালে গিয়ে ৫/১০ মিনিট কথা বলছে। জানি না কী বলছে? তারপর রাত আনুমানিক ১টার দিকে পুলিশ রোহিঙ্গা লোকটিকে নিয়ে থানায় চলে যায়।
গতকালের ঘটনায় সন্দ্বীপ নদী সিকস্তি সমিতি সহ অপরাপর সংগঠন এর নেতৃবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এতদিনের আশঙ্কা সত্য প্রমানিত হল। একদিকে লকডাউন, অন্যদিকে প্রশাসনের সহযোগিতায় সন্দ্বীপ উপজেলার উরিরচর ইউনিয়নে চলছে নোয়াখালী কোম্পানিগঞ্জবাসীর হাইকোর্টের রায় উপেক্ষা করে অবৈধভাবে পিলার স্থাপনের কাজ এবং সন্দ্বীপের আজিমপুরে আটককৃত রোহিঙ্গা শরনার্থী হাসানের উপস্থিতি প্রমান করে সন্দ্বীপের আন্তঃসীমানা বিবাদ মিমাংসা করার নিমিত্তে হাইকোর্টের দেযা রায়কে নস্যাৎ করতে মহল বিশেষ সন্দ্বীপকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই পরিস্থিতিতে সন্দ্বীপের জনপ্রতিনিধি সহ সকলে মিলে এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো উচিত বলে মনে করেন সন্দ্বীপ নদী সিকস্তি পুনর্বাসন সমিতির আহ্বায়ক মনিরুল হুদা বাবন সহ অপরাপর সংগঠন এর নেতৃবৃন্দ।