বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ শুক্রবার এক ভরা সভায় নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিশ্বের পরাশক্তির দৃষ্টি আকর্ষিত হচ্ছে। একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ হচ্ছে।
এ সময় কোনো রকম তথ্য উপাত্ত ছাড়াই তিনি দাবি করেন, সর্বশেষ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তার মার্কিন ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এ রকম আরও অনেক আসবে। যদিও এটি আমাদের জন্য লজ্জাকর।
এ সময় ‘এদেশে সভা-সমাবেশ করার কোনো অধিকার নাই’ বলে দাবি করেন বিএনপির এই নেতা একটি সভাতে অনেক মানুষের সামনে বসে!
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ লেবার পার্টির উদ্যোগে আয়োজিত এক কনভেনশনে হাফিজ এমন ভুয়া দাবি করেন।
কিন্তু রাতেই ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতি বিএনপি নেতার এমন দাবিকে নির্লজ্জ মিথ্যাচার বলে প্রমাণ করে দিলো।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির পক্ষ থেকে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস কর্তৃপক্ষের কাছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ কর্তৃক দাবিকৃত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের সত্যতা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয়।
ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ সময় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র জানান, র্যাবের ৭ জন কর্মকর্তার ইস্যুটির পর আর কোনো নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। যদি কেউ এমন দাবি করে থাকে, তবে তা সবৈব মিথ্যা এবং অপপ্রচার।
দূতাবাসের মুখপাত্র আরও জানান, ভিসা সংক্রান্ত বিষয়গুলো মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী সুরক্ষিত। এ বিষয়ে বাইরের কেউ কোনো তথ্য পেতে পারেনা। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিপত্র জারি করার পূর্বেই কেউ যদি দাবি করে থাকেন, কারো ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তবে সেটি নিঃসন্দেহে মিথ্যাচার।
প্রসঙ্গত, এর আগেও বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে এভাবে ভিত্তিহীন গুজব ও মিথ্যাচার ছড়িয়ে পরবর্তীতে হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছিল।
এর আগে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতিসংঘের মহাসচিবের দরবারে বিচারের আর্জি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রওনা হন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরের সামনে দাঁড়ানো অবস্থায় তোলা ছবি নিয়ে দেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক বিবৃতি দেয় বিএনপি।
দাবি করা হয়, জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে একান্ত বৈঠক করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এবং সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে নালিশ করা হয়েছে, নির্বাচন বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।
অথচ পরবর্তীতে জানা যায়, এসবই মিথ্যা। জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে দেখা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও তিনি সাক্ষাৎকার পাননি। অতঃপর দলীয় নেতা-কর্মীদের সামনে মুখ রক্ষার্থে তিনি জাতিসংঘের বারান্দায় কয়েকটি ছবি তুলেই দেশে ফিরে এসেছেন।
পাকিস্থানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় বিএনপির প্রতি প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর অবিশ্বাস সবসময়। ফলে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ভাতের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্বে ছিল ভাটার টান। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিএনপি ভারতীয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপির সাথে সুসম্পর্ক দেখাতে গিয়ে করেছে নির্লজ্জ মিথ্যাচার।
২০১৫ সালে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান প্রেস ব্রিফিংয়ে দাবি করেন, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ খালেদা জিয়াকে ফোন করে শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন, কুশলাদি বিনিময় করেন। এছাড়াও বেশ কিছু বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। দেশের সব সংবাদমাধ্যম খবরটি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এটি মিথ্যাচার বলে শুরুতেই দাবি করা হয়।
পরে বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা হলে বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যম সরাসরি বিজেপি নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে অমিত শাহ স্বয়ং জানিয়ে দেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার কথা হয়নি। এটি নিছকই মিথ্যাচার। প্রকাশিত খবরটির কোনো ভিত্তি নেই।
সে সময় এই বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া বিএনপিকে নিয়ে এমন সব সংবাদ পরিবেশন করে, যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও ট্যাবলয়েডে এ নিয়ে ব্যাপক হাসি-ঠাট্টা করা হয়। যদিও স্বাভাবিকভাবেই বিএনপি এসবে কিছুই যায়-আসেনি, জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা।