স্টাফ রিপোর্টার:মোঃবাছেদ হোসেন শান্ত।
একটি ব্যাঙ এর জীবন চিত্র তুলে ধরলেন বগুড়ার বন্য প্রাণী প্রেমিক মোঃ মামুন উল হাসান শাওন।
২০ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ইং
“কোলা ব্যাঙ/সোনা ব্যাঙ/হোলা ব্যাঙ/ভাউয়া ব্যাঙ”-
বৈজ্ঞানিক নাম: Hoplobatrachus tigerinus, ইংরেজি: Bull frog বা Indian bull frog। বড় আকারের অতি পরিচিত ব্যাঙ যা বাংলাদেশের সর্বত্রই দেখা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মায়ানমার, পাকিস্তান, নেপাল ও আফগানিস্তানে এই ব্যাঙ দেখতে পাওয়া যায়। এটি Dicroglossidae পরিবারের Hoplobatrachus গণের অর্ন্তগত।
★ বৈশিষ্ট্য, বাসস্থান এবং আচরণ –
কোলাব্যাঙ পৃষ্ঠভাগের রং বাদামি থেকে সবুজাভ বাদামি, অধিকাংশের চোয়ালের সুচালো অগ্রভাগ থেকে পশ্চাৎভাগ পর্যন্ত মেরুদন্ডের মাঝামাঝি বরাবর একটি সরু, হলুদাভ-সাদা বলয় এবং চোখের পিছন থেকে দুপায়ের সংযোগস্থল পর্যন্ত পৃষ্ঠদেশে পুরু একটি হলুদাভ-সাদা বলয় রয়েছে। পেট সাদা।
বর্ষাকাল এদের প্রজনন মৌসুম। প্রজনন মৌসুমে দেহ উজ্জ্বল হলুদ রং ধারণ করে। দেহের দৈর্ঘ্য ১৭ সেমি ও পা ২২ সেমি পর্যন্ত হতে পারে।
এটি মূলত জলজ, প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম উভয়ই (বিশেষত ধানের ক্ষেত) মিঠা পানির জলাভূমি্তে বাস করে। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিশাচর। এরা গড়ে ০৭ বছর বাঁচে। এদের গড় ওজন ২০০ গ্রাম। পোকামাকড় এদের প্রধান খাদ্য। একটি ব্যাঙ প্রতিদিন এদের ওজনের প্রায় অর্ধেক পরিমানে পোকামাকড় খায়।
★ প্রধান হুমকি –
খাদ্য হিসেবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ব্যাঙের পা দেশের বাইরে রপ্তানি হতো। ব্যাঙের পা রপ্তানি বর্তমানে নিষিদ্ধ। অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে জলাভূমি হ্রাস, দীর্ঘমেয়াদি খরা এবং কীটনাশক এবং অন্যান্য কৃষি রাসায়নিক দ্রব্য দ্বারা জল দূষণ এই প্রজাতির টিকে থাকার জন্য প্রধান হুমকি ।
বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল ১ অনুযায়ী প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
এবং গবেষণা তথ্য অনুযায়ী ১৯৮০ সালের পর পৃথিবী থেকে ২০০ প্রজাতির ব্যাঙ হারিয়ে গেছে। প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০১৫ সালের রেড লিস্ট বা লাল তালিকা অনুসারে, বাংলাদেশে ৪৯ প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে। এর মধ্যে ১০ প্রজাতির ব্যাঙ বিপন্ন। বিপন্ন ব্যাঙের মধ্যে দুই প্রজাতি মহাবিপন্ন, তিন প্রজাতি বিপন্ন ও পাঁচ প্রজাতি সংকটাপন্ন অবস্থায়। ২৭ প্রজাতি কিছুটা উদ্বেগজনক অবস্থায় আছে। ৬ প্রজাতি বিপন্ন অবস্থায় নেই।
★ উপকারীতা –
ফসলী জমিতে কোলা ব্যাঙ ক্ষতিকর পোকামাকড় শতকরা ১৬-৪১ ভাগ কমিয়ে কৃষি ফসলের উৎপাদনে যথেষ্ট অবধান রাখছে। এছাড়াও মশা-মাছি ভক্ষণ করে মশা-মাছি বাহিত রোগ প্রতিরোধ করে কোলা ব্যাঙ।
কৃষি জমিতে ব্যাঙের মলমূত্র ও দেহাবশেষ পচে মাটির উর্বরতা শক্তি এবং ফসলের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শস্যক্ষেতের ঘাসফড়িং, সবুজ পাতাফড়িং, বাদামি গাছফড়িং, পামরি পোকা ও হলুদ মাজরা পোকা খেয়ে উপকার করে। ফলে অধিক পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না।
★একটি সরল অংক –
ব্যাঙ প্রতিদিন এদের ওজনের প্রায় অর্ধেক পরিমানে পোকামাকড় খায়।
একটি ২০০গ্রাম ওজনের প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যাঙ দৈনিক পোকামাকড় খায় ১০০ গ্রাম (তার ওজনের অর্ধেক),
তাহলে ব্যাঙটি তার পুরো জীবনে পোকামাকড় খায় ( ১০০ গ্রাম x ৩৬৫ দিন x ০৭ বছর) = ২,৫৫,৫০০ গ্রাম পোকামাকড় বা ২,৫৫,৫০০টি পোকামাকড় খায় (গড়ে প্রতিটি পোকামাকড়ের ওজন ১ গ্রাম ধরে)।
এবার ফসল বাঁচানোর হিসেবে আসা যাক –
এখানে আমরা ধরে নিতে পরি যে, ০১ গ্রাম ওজনের একটি পোকা তার পুর্নাঙ্গ জীবনে এক কেজি ফসল নষ্ট করে।
ধরে নিলাম ঐ নষ্ট ফসলের মূল্য হলো গড়ে ৩০.০০ টাকা।
তাহলে হিসেবটা এমন হবে যে, (২,৫৫,৫০০ টি পোকামাকড় x ৩০/- টাকা) = মোট ৭,৬৬৫,০০০ টাকার ফসল বাঁচায়।
© মোঃ মামুন উল হাসান শাওন
নির্বাহী পরিচালক
সাস্টেইনেবল এনভায়রনমেন্টাল ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (এসইডিবি)
শৈলী সমাজ উন্নয়ন সংস্থা।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট