স্টাফ রিপোর্টার:মোঃবাছেদ হোসেন শান্ত।
বগুড়ার বন্য প্রাণী প্রেমিক মোঃ মামুন উল হাসান শাওন এবার তুলে ধরলেন একটি খুঁড়ুলে পেঁচার জীবন কাহিনি।
#খুঁড়ুলে_পেঁচা, #খোঁড়লে_পেঁচা, #কোটরে_পেঁচা :
বৈজ্ঞানিক নাম : Athene brama. ইংরেজি: Spotted Owlet, বা স্ট্রিগিডি (Strigidae) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত ক্ষুদ্রকায় এক প্রজাতির পেঁচা। খুঁড়ুলে পেঁচার আবাস মূলত এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও লাওস। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলেও এদের দেখা যায়। এ প্রজাতিটি শ্রীলঙ্কায় নেই, তবে পক প্রণালীর আশেপাশে শ্রীলঙ্কার উপকূলে এদের দেখা যায়।
#বৈশিষ্ট্য_বাসস্থান_এবং_আচরণ:
বেশ নাদুস-নুদুস দেখতে এই ছোট পেঁচার চোখের চারিদিক ও গলা সাদা। চোখের তারা ফ্যাকাশে থেকে সোনালি হলুদ। শরীরের তুলনায় মুখ ছোট। পিঠের দিক গাঢ় বাদামী, তার উপর সাদা ফোঁটা থাকে। মাথার উপরের ফোঁটাগুলো ছোট আকারের। সাদাটে পেটের দিকে আনুভূমিক বাদামী রেখা দেখা যায়। বাদামী লেজে চিকন সাদা বলয়। ঠোঁট সবুজ, পা ও পায়ের পাতা অনুজ্জ্বল হলদে-সবুজ। স্ত্রী ও পুরুষ দেখতে অভিন্ন। দৈর্ঘ্যে কমবেশি ২৩ সেন্টিমিটার।
জোড়ায় জোড়ায় থাকে এবং এক জোড়া একই জায়গায় থাকতে পছন্দ করে। মাঝে মাঝে পারিবারিক দলেও থাকে। সন্ধ্যায় এবং খুব ভোরে এরা বেশি কর্মচঞ্চল। খুঁড়ুলে পেঁচা নিশাচর। রাতভর শিকার করে। প্রত্যেকটি জোড়ার নির্দিষ্ট সীমানার পরিচিত গাছের ফোকর, বড় ডালের গোড়ার আবডাল, অব্যবহৃত বাড়িঘর, দালান-কোঠার ফাঁক-ফোকরে দিন কাটায়। সাধারণত গাছের কোটরে বা খোঁড়লে এরা বাসা করে বলেই এদের এমন নাম, তবে দালান-কোঠার ফাঁক-ফোকরেও বাসা করতে দেখা যায়। মানব বসতি বা কৃষিভূমির আশেপাশে এদের সাধারণ আবাস, শহরেও এরা নিজেদের রপ্ত করে নিয়েছে। দিনে দু’-একবার রোদ পোহায় ও শত্রু পর্যবেক্ষণ করে। বাদলা দিনের সকালে বা বিকালে খাবার ধরার জন্য বের হতে পারে। এরা দিনের প্রহরে দু’-একবার ডাকলেও রাতের প্রায় সব প্রহরেই ডাকে এবং অনেকসময় অন্য পাখিদের সাথেও যোগ দিয়ে ডাকতে পারে। দিনের বেলায় এ পেঁচার দর্শন পেলে ওদের দিকে তাকিয়ে মাথা উঁচু-নিচু করলে ওরাও সুন্দর ভঙ্গিতে ওদের মাথা উঁচু-নিচু করে।
এদের প্রজনন মৌসুম নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। প্রজনন মৌসুমে ছোট মাথা এবং চকচকে লেজ দেখে স্ত্রী পেঁচাকে চেনা যায়। এদের বাসা বাঁধার উপাদানগুলোর মধ্যে থাকে শুকনো পাতা, পালক ও খড়কুটো। একসঙ্গে তিন থেকে চারটি ডিম দেয় কোটরে পেঁচা। গোলাকার ডিমগুলো হয় সাদা রঙের। ২৫ দিনে ডিম ফোটে। ৩০ দিনে ছানাদের গায়ে পালক গজায়।
#খাদ্যভ্যাস :
খুঁড়ুলে পেঁচা মাংসাশী শিকারী পাখি। ইঁদুর আর ছুঁচো এদের প্রধান শিকার। এছাড়া খাদ্য তালিকায় আছে উড়ন্ত পোকা, টিকটিকি, বাদুড়, ছোট পাখি ও ছোট স্তন্যপায়ী। এরা মূলত ঠোঁট দিয়ে শিকার করে, ঠোঁট দিয়ে শিকারের ঘাড় ভেঙে দেয়। নখ মৃত শিকার ধরার কাজে ব্যবহার করে। পুরো শিকার একবারে গিলে খায়। শিকারের হজম না হওয়া অংশ, যেমন হাড় ও লোম এরা দলা আকারে উগরে দেয়, ইংরেজিতে একে পেলেট বলে।
#প্রধান_হুমকি:
এরা বিশেষক্ষেত্রে রাতে ইঁদুরের খোঁজে ফল বাগনের আশেপাশে বিচরণ করে। আমরা প্রায়ই দেখি ফল বাগানের মালিকগণ তাদের ফল বাগানকে রক্ষা করার জন্য বাগানের চারদিকে অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে ঢেঁকে দেয়। যখন এরা ইঁদুর ধরতে যায় তখন এরা ঐসব জালে আটকা পড়ে নির্মমভাবে মারা পড়ে।
আবার অনেকক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের লোকজন পেঁচার ডাক শুনলে মৃত্যু হয় বা এরা অশুভ আত্মার বাহক এমন কুসংস্কার এর ফলে এদের হত্যা করে।
এছাড়াও ভারতীয় উপমহাদেশে একসময় বিশ্বাস করা হতো, পেঁচার ঔষধি গুণ আছে। আর তাই পেঁচার হাড়-মাংস-রক্ত দিয়ে তৈরি করা হতো রাতকানাসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ। এ ক্ষেত্রেও এদের হত্যা করা হতো।
বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা কমে গেলেও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায় নাই। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. খুঁড়ুলে পেঁচাকে Least Concern বা আশঙ্কাহীন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
#উপকারীতা :
আমাদের অর্থনীতিতে পেঁচা অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে। পেঁচাদের প্রধান শিকার ইঁদুর। আর এই ইঁদুর হচ্ছে ফসলের শত্রু। ইসরায়েল, জর্ডান ও প্যালেস্টাইন অঞ্চলে কৃষিজমির আশপাশ দিয়ে পেঁচার জন্য বাসা বানিয়ে রাখা হয়। এক জোড়া পেঁচা বছরে গড়ে দশ হাজার ইঁদুর শিকার করে।
এছাড়াও এরা ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড়ও খেয়ে ফসল ও কৃষকের উপকার করে থাকে।
#একটি_ছোট্ট_অংক :
কৃষিবান্ধব পেঁচা আমাদের কৃষিক্ষেত্রে যে পরিমাণ উপকার করে তা একটি ছোট্ট অংক দিয়ে বুঝাতে চেষ্টা করলাম । আমাদের ফসলের চির শত্রু ইঁদুর। আবার পেঁচার প্রধান খাদ্যও ইঁদুর। নিশাচর পেঁচার মতো ইঁদুরও রাতে বের হয়। যেখানে ইঁদুরের আনাগোনা বেশি থাকে সেখানে পেঁচারও আনাগোনা।
একটি ছোট আকারের পেঁচা প্রতিরাতে কমপক্ষে একটি ইঁদুর খায়,
একটি ইঁদুর বছরে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকার শস্য ধ্বংস করে থাকে। তা হলে একটি পেঁচা প্রতিবছর ১০ হাজার x ৩৬৫ = ৩,৬৫০,০০০(৩৬ লাখ ৫০ হাজার) টাকার রক্ষা করে।
একটি পেঁচা গড়ে ১০ বছর বাঁচে তাহলে সে ফসল রক্ষা করে ৩,৬৫০,০০০ টাকা x১০ বছর = ৩৬,৫০০,০০০ (৩৬ কোটি ৫ লক্ষ) টাকার ফসল রক্ষা করে।
© মোঃ মামুন উল হাসান শাওন
নির্বাহী পরিচালক
সাস্টেইনেবল এনভায়রনমেন্টাল ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (এসইডিবি)
শৈলী সমাজ উন্নয়ন সংস্থা।
১৮ ফেব্রুয়ারী-২০২১ ইং
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট