নওগাঁ প্রতিনিধিঃ
নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার বড়থা ডি আই ফাজিল মাদ্রাসার আলেম শাখায় ক্লাসের কোন প্রয়োজন হয় না। অনুসন্ধানী তথ্যে উঠে আসে যে, একই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখায় ধার করে এবং ভাড়া করে ছাত্র ভর্তি দেখানো হলেও ক্লাস নেওয়া হয় মাত্র লোক দেখানো। এখানে এবতাদায়ী ও দাখিল শাখায় বিভিন্ন কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের এখানে ভর্তি করে রাখা হয়। ঐ সকল ছাত্রের কোন সময়ই বড়থা মাদ্রাসায় ক্লাশ করার দরকার হয় না। অতি নগন্য সংখ্যক কিছু ছাত্র কেবলমাত্র ঐ দুই শাখায় নিয়মিত, যার সংখ্যা দিয়ে এমপিও টিকে থাকার কথা নয়, বিধায় অন্য কওমী মাদ্রাসার ছাত্র এখানে জোড়া দেয়া থাকে এমপিও টিকে রাখার স্বার্থে। আলেম শাখার চিত্র ভিন্ন, এখানে সারাবছর ধরে শিক্ষকেরা বাইরে ঘুরে ঘুরে ৫০, ৬০, ৭০ জন ছাত্রের তালিকা করে রাখে। সেখান থেকে কে কোন বছর ভর্তি, রেজিষ্ট্রেশন ও ফরম ফিলাপ করবে তা শিক্ষকেরা নির্ধারন করে পরে। ঐ সকল ছাত্রের পিছনে তারা প্রতিষ্ঠানের টাকা, দানের টাকা প্রথমে ইনভেষ্ট করে বাইরে ঘুরাঘুরির খরচ, চা-নাস্তা, পকেট খরচ বাবদ। পরে পরীক্ষার সময় তারা এসে পরীক্ষা দিলেই দুইটা ফায়দা: ১। সার্টিফিকেট বিক্রি, ২। এমপিও এর জন্য ছাত্র পাশের সংখ্যা ঠিক রাখা। ফলে কোন বছর সংখ্যা পূরন হয়, কোন বছর সংখ্যা পূরন হয় না। সংখ্যা পূরন না হলে, ঢাকা যোগাযোগ ঝাড়ফুক তাবিজ তুম্বার জন্য, যাতে এমপিও বজায় থাকে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক আবুল কালাম, দুই রাজ্জাক, নুরল ইসলাম, হারুন আলেম শাখার বিল পাইলেও ছাত্র ঘাতটির ফলে ইসতিয়াকসহ অনেকেই বিল পায় না, কারন এমপিও এর শর্ত ফেল করেছে তাদের জন্য। কালাম গং নতুন ফরমুলা বের করেছে যে, ছাত্র ভর্তি করিয়ে রেখে পরীক্ষা দেওয়াতে পারলেই কেল্লা ফতে। আর অধ্যক্ষের বর্ননা মোতাবেক পরীক্ষার আগ দিয়ে ও পরীক্ষার সময় ভয় দেখিয়ে ঢোড়সাপের মতো কালামের কিছু মাছ শিকার তো আছেই যা বাড়তি উপরি ইনকাম। এবিষয়ে অধ্যক্ষের মন্তব্য থেকে জানা যায় যে, আলেম শাখায় আমি ছাড়া কেহই তেমন ছাত্র যোগাড় করতে পারে না। আগামী আমার তিন বছর কর্মকালের জন্য আলেম শাখার ছাত্র রেডি করা আছে। তাকে যখন প্রশ্ন করা হয় যে, ভর্তি বুঝা গেল, কিন্তু নিয়মতি ক্লাশ না করেও কিভাবে পার পাচ্ছে শিক্ষকেরা বা ঐ ছাত্ররা কিভাবে নিয়মিত হিসাবে সার্টিফিকেট পাচ্ছে? জবাবে তিনি জানান যে, ছাত্ররা অধিকাংশ অনেক গরীব, তাই তারা ক্লাশ করতে পারে না, অন্যত্র কাজ করে, পরীক্ষার সময় তারা এসে পরীক্ষা দেয়, আর আলেম শাখার সকল শিক্ষক সর্বদা তাদের খোঁজ-খবর রাখে, এজন্য আলেম শাখায় কোন শিক্ষক বা ছাত্রের ক্লাশে উপস্থিত থাকা সম্ভব না। আসলে এখানে অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, দু,একজন ছাত্র গরীব হলেও, অনেক গৃহবধু, ব্যবসায়ী ঐ সকল ছাত্রই মূল ব্যবসার পূঁজী।
অধ্যক্ষকে রেগুলার ক্লাশ না করার বিষয়ে আরো চেপে ধরলে তিনি জানান যে, বাংলাদেশের সব মাদ্রাসাই নাকি এমন ভাবে চলে। আসলে বাস্তব চিত্র, অধ্যক্ষের বক্তব্য শুধু বড়থা মাদ্রাসার সাথেই মিলে। যার কারনে, অধ্যক্ষের বক্তব্য অনুসারে, বাংলাদেশের বিভিন্ন মাদ্রাসার মতো আমাদের মাদ্রাসা চলে না, আমাদের আলেম শাখায় ক্লাসের প্রয়োজন হয় না, অন্যান্য মাদ্রাসার সঙ্গে বড়থা ডি আই ফাজিল মাদ্রাসার তুলনা করলে হবে না, কারণ এখান কোন শিক্ষকগণ ছাত্র ধরার জন্য ১১ মাস বাইরে কাজ করে, আলেম শাখার শিক্ষকদের এই কারণে ক্লাসের প্রয়োজন হয় না ।
সর জমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য শাখায় ও ছাত্র নাই তবে একটি গোপন সূত্রে জানা যায় এই প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা দিয়ে ছাত্র ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়, সার্টিফিকেটের আশা দিয়ে বিভিন্ন হাফেজিয়া মাদ্রাসা থেকে ছাত্র এনে একটি করে সার্টিফিকেট এবং কিছু অর্থ উপার্জনের জন্য পরীক্ষার হলে পরীক্ষা দেওয়ানো হয়, শুধু তাই না এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বেশিরভাগই দুর্নীতি মামলা রয়েছে বিভিন্ন রকম প্রতারনা করার জন্য, যার জন্য শিক্ষকরা সবসময় আদালতের বারান্দায় পড়ে থাকেন। সুশীল সমাজের শিক্ষকগণ অর্ধেক সময় আদালতের বারান্দায় ঘুরাঘুরি করেন। কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক তারা বলেন, আমরা এই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করি কিন্তু আমাদের সঙ্গে পরীক্ষার হলে যে সকল ছাত্র-ছাত্রী দেখতে পাই কোথায় থেকে আসে তারা? আমরা বলতে পারি না, সারা বছরে একদিনও তাদের সঙ্গে ক্লাসে দেখা মিলে না, আমাদের পরীক্ষার সময় প্রিন্সিপালের বড় লিস্টের ছাত্ররা, সামনের বেঞ্চে বসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং আমাদের শিক্ষকরা নিয়মিত মাদ্রাসায় আসেনা, মাদ্রাসায় আমরা যদিও আসি বসে থেকে থেকে চলে যেতে হয়, ক্লাস নেওয়ার নামে কোন খবর থাকে না, আমাদের শিক্ষকদের এরকম যদি চলতে থাকে আমাদের অভিভাবকরা আমাদের আর এই মাদ্রাসায় আসতে দিবে না। অনেকবারই আমাদের অভিভাবকরা বাধা দিয়েছে, তারপরও আমরা আসি কিন্তু আমাদের শিক্ষকরা ক্লাস তো নেয় না। পরীক্ষার হলে বাহির থেকে ছেলেপেলে ভাড়া করে নিয়ে আসে পরীক্ষা দেওয়ায় কথা বলে জানিয়েছেন তারা। এই প্রতিষ্ঠানের অফিস সহায়ক কাম কম্পিউটার অপারেটর মাজেদুর ইসলাম বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন নিয়মে চলে, তবে আমাদের প্রতিষ্ঠানে একটু ছাত্র কম এই ব্যাখ্যাগুলো প্রিন্সিপাল দিতে পারবে কিন্তু পরীক্ষার সময় ছাত্র ঠিকই আছে, কোথায় থেকে আসে তা জানি না আমি, অন্য সময় ছাত্র আছে কয়েকজন, পরীক্ষার আগেই আমাদের প্রিন্সিপাল ছাত্র কোথায় থেকে নিয়ে আসে, তা জানি না বলে জানিয়েছেন তিনি। এই প্রতিষ্ঠানের একজন ছাত্র রিফাত হোসেন এর বাবা আমজাদ হোসেন বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন অনিয়ম, ছাত্রছাত্রী নেই শিক্ষকরা ক্লাস নেয়না, এক একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে চারটা পাঁচটা করে মামলা, তারা সব সময় আদালতের বারান্দায় ঘুরাঘুরি করে, অথচ পরীক্ষার সময় কোথায় থাকে ছোট ছোট ছাত্র ভাড়া করে নিয়ে চলে আসে এরা, যত জালিয়াতী করে প্রিন্সিপাল, কালাম, রেজাউল, রাজ্জাক, মিজানুর, এপি নূরলসহ আরো কয়েকজন, এই অনিয়ম ২২ বছরের ও ২২ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা অবৈধভাবে সরকারী টাকা এপিও এর মাধ্যমে ভোগ করে আসছে, এরা ঘুরে বেড়ায়, কেউ অনেক বড় রাজনীতি করে বেড়ায় যেমন, কালাম ও রেজাউল কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কেউ বলতে গেলেই তার পিছনে বাঁশ দেয়ার জন্য লেগে পড়ে তারা। তাদের বিষয়ে বিরক্ত হয়ে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি তাদেরকে শোকজ, বেতন বন্ধ, তিরস্কার করেও কিছুই করতে পারেন নাই বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। এসব বিষয়ে সভাপতি তাদের শাসন করলে, সভাপতির পিছনে তারা লেগে যাওয়ায়, সভাপতি তাদের বিরুদ্ধে প্রেস ব্রিফিং করে বসে আছে যা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম খোদাদাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নাই।