মোঃসাদ্দাম হোসাইন সোহান ,
বিশেষ প্রতিনিধিঃ-
বীর শ্রেষ্ট আব্দুর রউফ এর বাড়ির সামনে গড়াই নদী থেকে অবৈধ বালু – মাটি উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হতে চলেছে বীর শ্রেষ্ট আব্দুর রউফ এর বাড়িসহ নদী পাড়ের অসংখ্য ফসলী জমি।দেশজুড়ে বিভিন্ন নদী, খাল-বিল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে একশ্রেণীর দুর্বৃত্ত। তারা এতটাই বেপরোয়া যে, আইন-কানুন মানা এবং পরিবেশসহ অন্যান্য দফতরের অনুমতির তোয়াক্কা তো দূরের কথা, তাদের অবৈধ কার্যক্রম দেখতে গিয়ে হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে সরেজমিনে যাওয়া সংবাদকর্মীদের।
দেশের বিভিন্ন এলাকার নদ-নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে সন্ত্রাসীরা। এতে করে নদীর পাড়ে ভাঙন, রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়া, নদীর গতিপথ পরিবর্তনে জলবায়ু ও পরিবেশগত ক্ষতি, বালু উত্তোলন এলাকায় ধুলাবালি উড়ে পরিবেশ বিপর্যয়সহ নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
পরিবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সামনে রেখে দেশজুড়ে অবৈধ বালু উত্তোলকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরকারী বিধি নিষেধ থাকা সত্ত্বেও দিনের পর দিন এক শ্রেণির অসাধু বালু ব্যবসায়ী ও ড্রেজার মালিক প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এ বালু উত্তোলন করছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নদীবক্ষে অবৈধ ড্রেজার ও বেকু লাগিয়ে পার্শ্ববর্তী কামারখালী বাজার সংলগ্ন এলাকায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ডোবা, খানাখন্দ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ফসলী জমি ভরাটের কাজ করছে। বালু- মাটি উত্তোলন বন্ধে এলাকাবাসীর তীব্র আপত্তি থাকলেও অবৈধ ড্রেজার ও বেকুর মালিক আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেই চলেছে।
ভূ-গর্ভস্থ বা নদীর তলদেশ হতে বালু বা মাটি উত্তোলন সংক্রান্ত বিশেষ আইনের ৫ এর (১) ধারায় দেখা যায়, পাম্প, ড্রেজিং মেশিন বা অন্য কোন মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ হতে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। অথচ ড্রেজার মালিকরা এ আইনকে তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়তই বালু , মাটি উত্তোলন করছে। উদ্বেগের বিষয়, অবৈধ বালু উত্তোলকরা কেবল বালু তুলেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, তারা নদী, খাল-বিল দখলেও বেপরোয়া। অবৈধ বালু তোলার সুবিধার্থে নদীর পাড়ে স্থাপনা তৈরির পাশাপাশি নদীতীরে স্থাপনা তৈরি করে পানির প্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে তারা। ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার মতো সমস্যাও তৈরি হচ্ছে কোনো কোনো এলাকায়।
এমন দুষ্কর্মে অবৈধ বালু উত্তোলকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা।
এমন দুষ্কর্মে অবৈধ বালু উত্তোলকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে পুলিশও মাসোহারা নিয়ে চুপ থাকছে। এ অবস্থায় নদী ও পরিবেশ দখল-দূষণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই।
দুর্ভাগ্যের বিষয়, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ ও নদী দখল-দূষণের বিরুদ্ধে আদালত বিভিন্ন সময় নির্দেশনা দিয়েছেন; কিন্তু এক্ষেত্রে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও কেন অবৈধ দখলদার-বালু উত্তোলকদের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা নেয়া হয় না, তা আমাদের বোধগম্য নয়।সমস্যা সমাধানে পরিবেশ অধিদফতর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ টাস্কফোর্স নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। বর্তমান সরকার দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়েছে।
দেশের পরিবেশ, অবকাঠামো ও সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে অবৈধ দখলদার এবং বালু উত্তোলন করে পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলা দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে।