বিশেষ প্রতিনিধি মোঃ সুমন আহমেদঃ নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান কোম্পানীগঞ্জে এক সরকারি কর্মকর্তার রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় একজন সরকারি কর্মকর্তার সক্রিয় রাজনীতি ব্যবসা পরিচালনা ও আসন্ন ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতার ঘোষণায় সচেতন মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
আলোচিত ওই সরকারি কর্মকর্তার নাম মাহবুবুর রহমান আরিফ। তিনি বর্তমানে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা যুব উন্নয়ন কার্যালয়ের সহকারি যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।
পাশাপাশি বিগত (২০১২) সাল থেকে অদ্যবধি তিনি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৪নং চরকাঁকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন এবং বসুরহাট এইচ আর সিটি কমপ্লেক্সে বিলাস বিপনী বিতান নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও পরিচালনা করে আসছেন।
বর্তমানে ওই সরকারি কর্মকর্তা চাকুরীতে বহাল থেকে নিজ এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৪নং চরকাঁকড়া ইউনিয়ন পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে নিজেকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ঘোষণা করে দিনরাত গণসংযোগ শুরু করায় সরকারি চাকুরী আচরণ বিধিমালা নিয়েও সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
যদিও গণকর্মচারী আচরণ বিধিমালা (১৯৭৯) এর বিধি(২৫) (১) এ স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, সরকারি কর্মচারী কোন রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোন অঙ্গ সংগঠনের সদস্য হতে বা অন্য কোনভাবে উহার সাথে যুক্ত হতে পারবেন না, অথবা বাংলাদেশে বা বিদেশে কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে বা কোন প্রকারেই সহায়তা করতে পারবেন না।
এছাড়া একই বিধিমালার (২৫) (৩) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, সরকারি কর্মচারী বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ অথবা অন্যত্র কোন আইন সভার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অথবা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে বা অন্য কোনভাবে হস্তক্ষেপ করতে বা প্রভাব খাটাতে পারবেন না।
এমনকি আচরণ বিধিমালার (৩২) ধারা বলা আছে, এই বিধিমালার কোন বিধান লঙ্ঘন করলে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা (১৯৮৫) এর আওতায় অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে কোন সরকারি কর্মচারী এ বিধিমালার কোন বিধান লঙ্ঘন করলে উপরো ল্লিখিত বিধিমালার আওতায় অসদাচরণের দায়ে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দায়ী হবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুবর্ণচর উপজেলা সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান আরিফ ঠিক মতো অফিসে না গিয়েও দীর্ঘদিন চাকুরীতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন এবং প্রতিমাসে নিয়মিত বেতনও তুলে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে অফিস থেকে বার বার বলা হলেও তিনি (আরিফ) সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের দোহাই দিয়ে সরকারি চাকরীর বিধিমালা ভঙ্গ করে আসছেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১নং সিরাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরনবী চৌধুরী বলেন, মাহবুবুর রহমান আরিফ (২০১২) সাল থেকে চরকাঁকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আমরা জানি অনেক আগে তিনি সরকারি চাকুরী থেকে অব্যহতি নিয়েছেন। তিনি যদি সরকারি চাকুরীতে বহাল থাকেন তাহলে বিষয়টি দলীয় ফোরামে আলোচনা করবেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে ইউনিয়ন আলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নিযুক্ত থাকার কথা স্বীকার করে মাহবুবুর রহমান আরিফ বলেন, এটি একটি সামাজিক কাজ। তাছাড়া আমি যে উপজেলায় চাকরী করি সে উপজেলায়তো রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নই।
এ ব্যাপারে সুবর্ণচর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন সোহেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বুধবার (২৭) জানুয়ারি সকালে জানান, ‘তার (আরিফ) যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে আমি একমাস আগে বদলী হয়ে এখন বেগমগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত আছি’। তিনি আরও বলেন, আরিফ সাহেব সরকারি বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন অফিসে অনুপস্থিত থেকে রাজনীতি ও ব্যবসা করে আসছেন। এ ব্যাপারে কিছু বললে তিনি বিভিন্ন ধরণের অজুহাত দেখান।
সুবর্নচর উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা নার্গিস আরা বেগম বলেন, দুরবর্তী উপজেলা হওয়ায় তিনি সেখানে নিয়মিত যেতে পারেন না। তবে সরকারী কর্মচারী হিসেবে বহাল থেকে কেউ রাজনীতিতে জড়িত হতে পারেন না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সূবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম ইবনুল হাসান জানান, কোন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী সরাসরি রাজনীতিতে অংশগ্রহন করতে পারেন না। এটা সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিষয়টি নিয়ে জেলা দুদকের নোয়াখালীর সহকারী পরিচালক সুবেল আহমদের সাথে কথা বললে তিনি জানান, এটি অবশ্যই দুর্নীতির আওতায় পড়ে। সেক্ষেত্রে কেউ যদি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ করে তাহলে সেখান থেকে তদন্তের নির্দেশ আসলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারি।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের নোয়াখালীর উপ পরিচালক মোঃ ইসহাক বুধবার (২৭) জানুয়ারি সকালে দৈনিক বাংলাদেশ ৭১ সংবাদ কে বলেন আমি এ দায়িত্বে নতুন যোগদান করেছি একজন সরকারি কর্মচারী কিভাবে পদ-পদবী ব্যবহার করে কীভাবে সক্রিয় রাজনীতি করেন তা আমার বোধগম্য নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে উষ্মা প্রকাশ করেন নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান। তিনি দৈনিক বাংলাদেশ ৭১ সংবাদ কে বলেন, যদি কোন সরকারি কর্মচারী রাজনীতি ব্যবসা কিংবা নির্বাচনে প্রার্থীতার ঘোষণা দেন, তবে তিনি অন্যায় করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাসও দেন তিনি।