মোঃ সোহাগ হোসেন স্টাফ রিপোর্টার
জামালপুর জেলাঃ
মানুষ সৃষ্টি জগতের শ্রেষ্ঠতম প্রাণী । মানুষের হাতেই গড়ে উঠেছে সভ্যতা । বিশ্বাস অবিশ্বাসের বিষয় নয় । বিশ্বযুড়ে সভ্যতাকে নিয়ন্ত্রণ করছে রাজনীতি । রাজনীতি ছাড়া ব্যক্তি সমাজ কিংবা ‘রাষ্ট্রের কোথাও কোন কাজ করা সম্ভব নয়’ এই বাক্যটি এখন স্বতঃসিদ্ধ হয়ে গেছে । যিনি মজ্জাগত ভাবে রাজনীতিকে অপছন্দ করেন, সারাক্ষণ রাজনীতির ভুলত্রুটি নিয়ে সমালোচনা করেন, রাজনীতির চৌদ্দগোষ্ঠী তুলে গালিগালাজ করেন – তিনিও সুযোগ খোঁজেন রাজনৈতিক একটি পরিচিতি পাওয়ার জন্য ।
খুব নিকট অতীতেও গ্রামের রাজনীতি পরিচালিত হ’তো গোষ্ঠী-গোত্র ভিত্তিক । অশিক্ষা ও দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে কিছু অর্ধশিক্ষিত চালাক চতুর মানুষ বংশের প্রভাব খাটিয়ে ছোট ছোট গোত্র ও দরিদ্র মানুষগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতো । লাঠির জোরে নিয়ন্ত্রণ হ’তো গ্রামের রাজনীতি ‘ভিলেজ পলিটিক্স’ । উপরের মহল বলে পরিচিত সরকার দলীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে দেন-দরবার এই পলিটিক্স’কে সমৃদ্ধ করেছে যুগে যুগে । নেতৃত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে বহুবিবাহ এবং অধিক সংখ্যক পুত্রসন্তান জন্ম দেয়ার প্রবণতাও ছিল এদের মধ্যে । আস্তে আস্তে সেই প্রবণতা এখন বিলুপ্ত প্রায় । জাতীয় রাজনীতির সাথে সংযুক্ত হয়ে বহুল পরিচিত ভিলেজ পলিটিক্স এখন অচল হয়ে গেছে । ভিলেজ পলিটিক্সের পলিটিশিয়ান’রা কিছুদিন তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের গোষ্ঠী তুলে গালি-গালাজ ধমকা-ধমকি করে কোন সুফল না পেয়ে নিজেই এসে দাঁড়িয়েছেন রাজনীতির লাইনে । একটি পদ তার না হ’লে আর চলে না । অনেকেই পেয়েও গেছেন । এবং সমস্যাটা হয়েছে এখানেই । তাঁদের কাছে রাজনীতির নীতি আদর্শ একেবারেই গৌণ, ক্ষমতা-ই মূখ্য । ক্ষমতার ধারাবাহিকতায় রাজনীতির সুফল ভোগ করতে ‘যখন যেখানে যেমন, তখন সেখানে তেমন’ নীতিতে নিপুণভাবে কাজ করতে সিদ্ধহস্ত । প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দু:সময়ে নির্যাতিত নিবেদিতপ্রাণ পোঁড়-খাওয়া ত্যাগী কর্মীরা ভিতরে ভিতরে হতাশা ও অভিমানে ঝিনুকের মত নিজেকে গুটিয়ে নেন । ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাজনীতি ।
রাজনীতিতে যোগ-বিয়োগের খেলা নতুন কিছু নয় । এ’ক্ষেত্রেও পোঁড় খাওয়া পুরাতন কর্মীদের দায়িত্ব ও সচেতনতা অনেক বেশি প্রয়োজন । ফাঁকফোকর দিয়ে কিছু সুবিধাবাদী লোক সংগঠনে প্রবেশ করলেও বেশিরভাগ লোক দলে ভিড়েছে আলোচনা কিংবা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়েই । তবে দলের ভিতরে দল গড়ে তুলে নিজের অবস্থান পাঁকাপোক্ত করতে তথাকথিত কিছু কিছু নেতা সুবিধাবাদীদের দলে ঠাঁই করে দেন – যা একসময় বুমেরাং হয়ে দাঁড়ায় ।
জোরকরে কেউ সংগঠনে প্রবেশ করে থাকলে তা খুবই অন্যায় বটে । তবে আমি আমার এলাকায় যতটুকু দেখেছি বিনা আমন্ত্রণে কেউ আসেনি । সংগঠন করার অধিকার সবার আছে । সংগঠনের ভিতরে থেকে শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলতে হয় । গঠনতন্ত্র সেই নির্দেশণা দিয়েছে । এর ব্যত্যয় ঘটলে নতুন পুরাতন বলে কিছু নেই ।
জাতীয় রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য করার ধৃষ্টতা দেখাব না । বিগত এক মেয়াদ থেকে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি (ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটিকর্পোরেশন) নির্বাচন দলীয় মনোনয়নে অনুষ্ঠিত হচ্ছে । আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গোয়েন্দা রিপোর্ট, তৃণমূলের প্রস্তাবণা ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বিবেচনার মধ্যদিয়ে চুড়ান্ত করা হচ্ছে । তৃণমূলে জাতীয় প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে নানামুখী আলোচনা থাকলেও রাজনীতি বিকেন্দ্রীকরণে এ’টা একটা নি:সন্দেহে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত । চলমান সময়ে যাঁরা সংগঠন কর্তৃক মনোনীত হয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তাঁদের কার্যক্রম বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইতোপূর্বে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিতদের মতই অপরিবর্তিত । সংগঠনের পরিচর্যায় ইতিবাচক কোন পরিবর্তণ কোথাও দৃশ্যমান নয় । বরং দলীয় ভাবমুর্তি উজ্জল করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি দায়িত্ববোধের যায়গাটি অনেকাংশেই পক্ষপাতদুষ্ট । যা’ মোটেই প্রত্যাশিত নয় । আমাদের প্রত্যাশা – গণতান্ত্রিক চর্চ্চায় ইতিবাচক পরিবর্তণের মধ্যদিয়ে তৃণমূলে সংগঠন’কে শক্তিশালী করতে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিরা নিজ সংগঠনের পরিচর্যা, দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন এবং জনগনের আস্থা অর্জণে আরও বেশি যত্নবান হবেন ।
চেয়ারম্যান,
উপজেলা পরিষদ, মাদারগঞ্জ, জামালপুর[]